আজকে যে ঘটনার কথা আমি আপনাদের বলতে যাচ্ছি সেই রকম ধরণের ঘটনা আগে আমি খবরের কাগজে পড়েছিলাম কিন্তু সেটা আমার সঙ্গে হবে কোনো দিন ভাবতেই পারিনি। আমার প্রভু আমার ঈশ্বর এর যে এত কৃপা আমার উপর সত্যি আমি ধন্য।
সেই দিনটা ছিল ৫ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার সময় হবে প্রায় সকাল ১০:৩০, আমি তখন বাবা তারাকনাথের মন্দিরে তীর্থযাত্রী দের পূজা করাচ্ছি, হটাৎ আমার ভাই এর ফোন এলো, ভাইয়ের ফোনটা আসা দেখে আমি বেশ অবাক হলাম কারণ ভাই আমাকে কোনোদিন এই সময়ে ফোন করে না। ফোনটা ধরতেই ভাই কাঁপা কাঁপা গলায় বললো দাদা আমাদের বড়ো বিপদ হয়ে গেছে, আমি খুব ভয়ে ভয়ে ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে। ভাইয়ের মুখে শুনলাম আমার বাবা জলখাবার খেয়ে ডিসটা নীচে রাখতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেছে, ঘরের চৌকাটে লেগে বাঁ চোখের উপর থেকে কপালটা ফেটে হাড় বেরিয়ে গেছে। The English Translation is given below.........
ভাই বললো আমাদের ফ্যামিলি ডাক্তার বাড়িতে এসেছিলেন, তিনি বাবাকে দেখে খুব ভয়ের সঙ্গেই জানিয়ে গেছেন যে, বাবার বাঁ চোখের উপরটা খুব ভয়ঙ্কর ভাবে ফেটেছে এবং প্রচুর রক্তপাত হয়েছে তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাছের কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে।
আমার ভাই তার এক বন্ধু ও আমার কাকা মিলে বাবাকে আমাদের বাড়ির কাছাকাছি একটি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলো, ডাক্তারবাবু আমার বাবাকে ভালো করে পরীক্ষা করে দেখে বললেন যে, "আপনার বাবার বাঁ চোখের উপরটা খুবই ভয়ঙ্কর ভাবে ফেটেছে, এই গ্রামীণ হসপিটালে এর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়, আমি ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি,আপনারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কোলকাতার এস.এস.কে.এম.(পিজি) বা মেডিক্যাল কলেজ হসপিটালে নিয়ে যান"।
ভাই ও ভাইয়ের বন্ধু মিলে অ্যাম্বুলেন্স এ করে বাবা কে কোলকাতার এস.এস.কে.এম.(পিজি) হসপিটালের ইমার্জেন্সি বিভাগে নিয়ে গেলো, আমাদের আদি বাড়ি তারকেশ্বর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে হবে এবং আমার পুরো পরিবার সেখানেই থাকে। আমি তারকেশ্বর থেকে ট্রেন ধরে হাওড়া এবং সেখান থেকে বাসে করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এস.এস.কে.এম.(পিজি) হসপিটালে পৌঁছলাম।
আমার বাবাকে তখন ইমার্জেন্সি বিভাগ থেকে ট্রমা কেয়ার বিভাগে ট্রানফার করা হয়েছে। আমি হসপিটালে গিয়ে বাবা কে দেখলাম মুখের একদিক পুরো ব্যান্ডেজ করা আছে, আর একদিক ফুলে গেছে, জামাতে রক্তের দাগ, আমি সহ্য করতে পারলাম না হসপিটালের বাইরে চলে এলাম। আবার বাবার সামনে যেতেই বাবা প্রচন্ড যন্ত্রনা ও কষ্ট সত্বেও আমাকে ক্ষীণ স্বরে জিজ্ঞাসা করলো, "কিরে কিছু খেয়েচিস? তোর ভাইকে ও তার বন্ধুকে কিছু খাইয়ে দে, আমি ঠিক আছি", বাবারা বোধহয় এই রকমি হয়, তার এতো কষ্ট এতো যন্ত্রনা সত্ত্বেও সন্তানদের চিন্তাই করতে থাকে।
ট্রমা কেয়ারে বাবার সিটি স্ক্যান হলো মাথার ভিতরে কোনো আঘাত লেগেছে কিনা জানার জন্য, যাক রিপোর্ট নর্মাল এলো। এর পর আই সার্জেন্ট এলেন বাবার চোখের পরীক্ষা করতে, বাবার চোখের ব্যান্ডেজ টা খুলতেই আমার সেই বিভৎস দৃশ্য দেখে মাথা ঘুরতে শুরু করলো, ভাগ্গিস হাতের কাছে ধরার কিছু ছিল না হলে পড়ে যেতাম, ডাক্তার বাবু বললেন, "আপনি বাইরে গিয়ে দাঁড়ান, এই সব দৃশ্য সহ্য করতে পারবেন না। মাথা ঘুরে পড়ে গেলে আপনার বাবাকে ছেড়ে, আপনার চিকিৎসা করতে হবে" সত্যি সেই দৃশ্য এখনো মনে পড়লে আমি এখনো শিউরে উঠি।
চোখের ডাক্তার বাবু ভালো করে পরীক্ষা করে জানালেন যে বাবার চোখের কোনো ক্ষতি হয়নি। ডাক্তার বাবুরা এবার ট্রমা কেয়ার থেকে বাবাকে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে নিয়ে যেতে বললেন। তখন প্রায় রাত্রী ৮ টা বেজে গেছে যখন আমরা বাবাকে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে নিয়ে গেলাম। বাবাকে প্রায় রাত্রী ৮:৩০ টার সময় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলো, ডাক্তার বাবুকে জিজ্ঞাসা করলাম, "স্যার অপারেশন করতে কতক্ষন সময় লাগবে", ডাক্তারবাবু বললেন প্রায় ১ থেকে দেড় ঘন্টা লাগতে পারে। আমরা অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
সময় কিছুতেই কাটতে চাইছে না, এক এক মিনিট মনে হচ্ছে এক এক ঘন্টার সমান। যত দেরী হতে থাকলো তত আমাদের টেনশন বাড়তে লাগলো। প্রায় দেড় ঘন্টা অর্থাৎ রাত্রী ১০ টা বেজে গেলো তখনও বাবার কোনো খবর পেলাম না। ওয়ার্ড বয়কে জিজ্ঞাসা করাতে সে বললো, "আমি কিছু জানি না, অপেক্ষা করুন সময় লাগবে", রাত্রী ১১ টা বেজে গেলো তবুও অপারেশন শেষ হলো না, রাত্রী ১১:৩০ টা বেজে গেলো তবুও অপারেশন থিয়েটারের দরজা খুললো না।
আমাদের মাথা তখন আর কাজ করছিলো না। যত সব বাজে চিন্তা ভাবনা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। বাড়ি থেকেও বার বার ফোন আসছিলো বাবা কি রকম আছে জানার জন্য, বাড়িতে কি বলবো ঠিক করতে পারছিলাম না। বাধ্য হয়ে মিথ্যা কথা বললাম যে বাবা ঠিক আছে। একে সারা দিন কিছু পেটে পড়েনি, তার উপর এই মারাত্বক টেনশন, নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিলো। বাবা তারাকনাথকে এক মনে ডাকছিলাম বাবা তুমিই শেষ ভরসা, তুমিই সবথেকে বড়ো ডাক্তার, সব ঠিক করে দাও বাবা ................................
শেষ অংশটি পরের ব্লগে ..................