রামেশ্বরম মন্দির, তামিলনাড়ু
তামিলনাড়ুতে অবস্থিত রামানাথস্বামী মন্দিরটি বারোটি পবিত্র জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে অন্যতম, পবিত্র নগরী রামেশ্বরম হিন্দুদের জন্য একটি মহান ধর্মীয় তাৎপর্য পূর্ণ চার ধাম তীর্থস্থান হিসাবে বিবেচিত হয়। মন্দিরটির সূক্ষ্ম স্থাপত্যের এক দুর্দান্ত উদহারণ, মজবুত টাওয়ার, ভাস্কর্যযুক্ত স্তম্ভ, জাঁকজমকপূর্ণ করিডোরগুলি আপনার হৃদয়কে পুরোপুরি ধর্মীয় ভাবাবেগে উদ্ভাসিত করবে।
শ্রী রামানাথস্বামী মন্দিরের বর্তমান কাঠামোটি ১৭ শতকের সময়ে নির্মিত হয়েছিল। মন্দিরটি বর্তমানে ১৫ একর জমিতে বিস্তৃত। এর দর্শনীয় স্তম্ভ, বিশাল করিডোর, দেয়াল এবং গোপুরাম প্রতিটি দর্শনার্থীকে আকৃষ্ট করে। এই মন্দিরটি চারপাশে প্রায় ৮৬৫ ফুট থেকে ৬৫৭ ফুট উচ্চতার বিশাল প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। রামেশ্বরম মন্দিরের বাইরের করিডোরগুলি ৩৮৩৮ ফুট দৈর্ঘ্য, বিশ্বের দীর্ঘতম হিসাবে বিবেচিত হয়। ৩০ ফুটের উচ্চতা সহ বাইরের করিডরে প্রায় ১২১২ টি স্তম্ভ রয়েছে এবং রাজাগোপুরমের মূল টাওয়ারটির উচ্চতা প্রায় ৫৩ মিটার। এই মন্দিরটি আর্কিটেকচারের শ্রেষ্ঠত্বের একটি দুর্দান্ত উদাহরণ।
মন্দিরটির দুর্দান্ত কাঠামো লম্বা করিডোর, নান্দনিকভাবে খোদাই করা স্তম্ভের সাহায্যে মন্দিরটি ৩৮ মিটারের গোপুরাম দিয়ে সজ্জিত। আরও বলা হয় যে করিডোরে ব্যবহৃত শিলাগুলি এই অঞ্চল থেকে নয়, তামিলনাড়ুর বাইরে কোথাও থেকে আনা হয়েছিল আর একটি চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য হলো পশ্চিমা গোপুরাম থেকে সেতুমাধব মন্দিরের প্রশস্ত পথ দাবা বোর্ডের আকারে নির্মিত, একে চক্কত্তন মন্ডপম বলা হয় যেখানে বসন্ত উৎসব চলাকালীন দেবদেবীদের রাখা হয়। কথিত আছে যে ১৮৯৭ সালে স্বামী বিবেকানন্দ এই মন্দিরে প্রার্থনা করেছিলেন।
এই মন্দিরটি ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মাঝখানে দৃঢ় ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এটি পাম্বান ব্রিজের মধ্য দিয়ে মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত একটি ছোট দ্বীপ। সমুদ্রের নির্মল বাতাস, কম জনাকীর্ণ মন্দির এবং পবিত্র জলাশয় নিয়ে এই বিখ্যাত দ্বীপ শহর বিশ্বজুড়ে ভ্রমণকারীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এই মন্দিরে ২২ টি তীরথাম বা পবিত্র জলের ট্যাঙ্কগুলি আছে। যাতে স্নান করলে ভক্তদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশের আগে, সমস্ত ভক্তদের মন্দির চত্বরে অবস্থিত ২২টি তিরথাম বা পবিত্র জলের ট্যাঙ্কগুলিতে স্নান করা বাধ্যতামূলক। শ্রী রামানাথস্বামী মন্দিরকে হিন্দু ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলিতেও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
মন্দিরের কিংবদন্তি অনুসারে, ভগবান রাম এখানে শিবের উপাসনা করেছিলেন। রামচন্দ্র, যিনি ভগবান বিষ্ণুর অবতার ছিলেন, রাবণকে বধ করার পরে ফিরে এসে ভগবান শিবকে প্রার্থনা করেছিলেন। রাক্ষস রাজ রাবণ, যিনি দেবী সীতার অপহরণ করেছিলেন, ভগবান রাম তাঁর নিষ্ঠুরতা শেষ করতে এবং দেবী সীতাকে উদ্ধার করতে তাঁকে হত্যা করেছিলেন। রাবণ ছিলেন একজন সৎ ব্রাহ্মণ, তাই রামচন্দ্র ভগবান শিবের উপাসনা করে প্রায়শ্চিত্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পূজা করার জন্য রামচন্দ্র হনুমানকে হিমালয় থেকে শিবলিঙ্গ আনতে বলেছিলেন। তবে হনুমান সময়মতো শিবলিঙ্গ নিয়ে ফিরতে পারেননি যার কারণে দেবী সীতা নিজেই বালি দিয়ে শিবলিঙ্গ তৈরি করেছিলেন। সেই বালি দিয়ে তৈরি শিবলিঙ্গতে রামচন্দ্র শুভ মুহূর্তে দেবাদিদেবের উপাসনা করেছিলেন। ভগবান শিব রামচন্দ্রের পূজায় সন্তুষ্ট হয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন এবং তাঁকে ব্রাহ্মণ হত্যার পাপ থেকে মুক্ত করেছিলেন। রামচন্দ্রের অনুরোধে দেবাদিদেব জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে আবির্ভাব হয়েছিলেন তাই এই শিবলিঙ্গ রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গ নামে খ্যাত।
এই মন্দিরে দুটি লিঙ্গ রয়েছে একটি রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গ আর দ্বিতীয়টি বিশ্বলিঙ্গ বা হনুমানলিঙ্গ (যা হনুমান কৈলাশ থেকে এনেছিলেন) এছাড়াও দেবী বিশালক্ষী, পার্বত্যাবর্ধিনী, বিশ্বনাথ, সায়ানগ্রহ (পল্লিরাই), শেঠুমাদব, শ্রী রামন্তস্বামী, ভগবান বিনায়ক, ভগবান সুব্রামন্যা এবং পেরুমালের মন্দির রয়েছে। আর একটি নন্দীস্বর এর বিশাল মূর্তি রয়েছে।
সমস্ত পৃথিবী থেকে ভক্তরা তাদের অতীত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে এই মন্দিরে আসেন। রামেশ্বরম মন্দিরের দর্শন ব্যতীত তীর্থযাত্রীদের কাশী সফর অসম্পূর্ণ। এই তীর্থস্থলটি শৈব ও বৈষ্ণব উভয় ভক্তদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
মন্দিরের আশেপাশে আরও অনেক পবিত্র স্থান রয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্নির্থম, গন্ধমাধম পর্বত মন্দির, পঞ্চমুখী হনুমান মন্দির, রাম সেতু, যদা তীর্থম মন্দির এবং কোঠন্দরামস্বামী মন্দির।
মন্দিরের সময়: প্রতিদিন ভোর ৫ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত আবার বেলা ৩ টা থেকে রাত্রি ৯ টা পর্যন্ত।
***************************************************************************
English translation:
Rameshwaram Temple, Tamil Nadu
The Ramanathaswamy Temple in Tamil Nadu is one of the twelve holy Jyotirlingas, the holy city of Rameshwaram being considered as a Char Dham shrine full of great religious significance for Hindus. A great example of the delicate architecture of the temple, the strong towers, the sculptural pillars, the magnificent corridors will illuminate your heart with a purely religious feeling.
The present structure of Sri Ramanathaswamy Temple was built in the 18th century. The temple is currently spread over 15 acres of land. Its spectacular pillars, huge corridors, walls and gopurams attract every visitor. The temple is surrounded by a huge wall about 75 feet to 758 feet high. The outer corridors of the Rameshwaram temple are 3638 feet long, considered to be the longest in the world. There are about 1212 pillars in the outer corridor with a height of 30 feet and the height of the main tower of Rajagopuram is about 53 meters. This temple is a great example of the excellence of architecture.
The magnificent structure of the temple is a long corridor, with the help of aesthetically carved pillars. The temple is decorated with a 36 meter gopuram. It is further said that the rocks used in the corridor were brought from somewhere outside Tamil Nadu, not from this region. It is said that in 1898 Swami Vivekananda prayed in this temple.
This temple stands firmly between India and Sri Lanka. It is a small island connected to the mainland by the Pamban Bridge. With its fresh sea air, less crowded temples and sacred reservoirs, this famous island city is the center of attraction for travelers from all over the world. This temple has 22 tirthams or tanks of holy water. So that bathing is believed to atone for the sins of the devotees. Before entering the sanctum sanctorum of the temple, all devotees are required to bathe in the 22 Tirthams or tanks of holy water located in the temple premises. Sri Ramanathaswamy Temple has also been described in significant ways in the holy scriptures of Hinduism.
According to the temple legend, Lord Rama worshiped Shiva here. Ramachandra, who was an incarnation of Lord Vishnu, came back after killing Ravana and prayed to Lord Shiva. The demon king Ravana, who kidnapped Goddess Sita, killed Lord Rama to end his cruelty and save Goddess Sita. Ravana was an honest Brahmin, so Ramachandra decided to atone by worshiping Lord Shiva. Ramachandra asked Hanuman to bring Shivling from the Himalayas for worship. However, Hanuman could not return with the Shivling in time due to which Goddess Sita herself made the Shivling with sand. In the Shivling made of that sand, Ramchandra worshiped Devadidev at the auspicious moment. Satisfied with the worship of Lord Ramachandra, Lord Shiva blessed him and freed him from the sin of killing a Brahmin. Devadidev appeared as Jyotirlinga at the request of Ramchandra, hence this Shivling is known as Rameshwaram Jyotirlinga.
There are two lingas in this temple, one is Rameshwaram Jyotirlinga and the other is Bishwalinga or Hanumanlinga (which Hanuman brought from Kailash). And there is a huge statue of Nandisvara.
Devotees from all over the world come to this temple to atone for their past sins. The pilgrimage to Kashi is incomplete without visiting the Rameshwaram temple. This place of pilgrimage is important for both Shaiva and Vaishnava devotees.
There are many more sacred places around the temple including the notable Agnirtham, Gandhamadham mountain temple, Panchamukhi Hanuman temple, Ram Setu, Jada Tirtham temple and Kothandaramswamy temple.
Temple time: Every day from 5 am to 1 pm and again from 3 pm to 9 pm.
******************************************************************************
हिंदी अनुवाद:
रामेश्वरम मंदिर, तमिलनाडु
तमिलनाडु में रामनाथस्वामी मंदिर बारह पवित्र ज्योतिर्लिंगों में से एक है, पवित्र शहर रामेश्वरम को हिंदुओं के लिए महान धार्मिक महत्व से भरा चार धाम मंदिर माना जाता है। मंदिर की नाजुक स्थापत्य कला, मजबूत मीनारें, मूर्तिकला के खंभे, भव्य गलियारे का एक बेहतरीन उदाहरण आपके दिल को विशुद्ध धार्मिक भावना से रोशन कर देगा।
श्री रामनाथस्वामी मंदिर की वर्तमान संरचना १८वीं शताब्दी में बनाई गई थी। मंदिर वर्तमान में 15 एकड़ भूमि में फैला हुआ है। इसके शानदार स्तंभ, विशाल गलियारे, दीवारें और गोपुरम हर आगंतुक को आकर्षित करते हैं। मंदिर लगभग 75 फीट से 758 फीट ऊंची एक विशाल दीवार से घिरा हुआ है। रामेश्वरम मंदिर के बाहरी गलियारे 3638 फीट लंबे हैं, जिन्हें दुनिया में सबसे लंबा माना जाता है। बाहरी गलियारे में 30 फीट की ऊंचाई वाले लगभग 1212 स्तंभ हैं और राजगोपुरम के मुख्य टॉवर की ऊंचाई लगभग 53 मीटर है। यह मंदिर वास्तुकला की उत्कृष्टता का एक बेहतरीन उदाहरण है।
सुंदर नक्काशीदार खंभों की मदद से मंदिर की भव्य संरचना एक लंबा गलियारा है।मंदिर को 36 मीटर गोपुरम से सजाया गया है। आगे कहा जाता है कि कॉरिडोर में इस्तेमाल की गई चट्टानें तमिलनाडु के बाहर कहीं से लाई गई थीं, इस क्षेत्र से नहीं। कहा जाता है कि 1898 में स्वामी विवेकानंद ने इस मंदिर में प्रार्थना की थी।
यह मंदिर भारत और श्रीलंका के बीच मजबूती से खड़ा है। यह पंबन ब्रिज द्वारा मुख्य भूमि से जुड़ा एक छोटा सा द्वीप है। अपनी ताजी समुद्री हवा, कम भीड़ वाले मंदिरों और पवित्र जलाशयों के साथ, यह प्रसिद्ध द्वीप शहर दुनिया भर के यात्रियों के आकर्षण का केंद्र है। इस मंदिर में 22 तीर्थ या पवित्र जल के टैंक हैं। ऐसा माना जाता है कि स्नान करने से भक्तों के पापों का प्रायश्चित हो जाता है। मंदिर के गर्भगृह में प्रवेश करने से पहले, सभी भक्तों को मंदिर परिसर में स्थित 22 तीर्थों या पवित्र जल के तालाबों में स्नान करना आवश्यक है। श्री रामनाथस्वामी के मंदिर का भी हिंदू धर्म के पवित्र ग्रंथों में महत्वपूर्ण शब्दों में वर्णन किया गया है।
मंदिर की किंवदंती के अनुसार, भगवान राम ने यहां शिव की पूजा की थी। रामचंद्र, जो भगवान विष्णु के अवतार थे, रावण को मारकर वापस आए और भगवान शिव से प्रार्थना की। राक्षस राजा रावण, जिसने देवी सीता का अपहरण किया था, ने अपनी क्रूरता को समाप्त करने और देवी सीता को बचाने के लिए भगवान राम का वध किया था। रावण एक ईमानदार ब्राह्मण था, इसलिए रामचंद्र ने भगवान शिव की पूजा करके प्रायश्चित करने का फैसला किया। रामचंद्र ने हनुमान से शिवलिंग को पूजा के लिए हिमालय से लाने को कहा। हालांकि, हनुमान समय पर शिवलिंग के साथ नहीं लौट सके जिसके कारण देवी सीता ने स्वयं शिवलिंग को रेत से बनाया। उस रेत से बने शिवलिंग में रामचंद्र ने शुभ मुहूर्त में देवदिदेव की पूजा की। भगवान रामचंद्र की पूजा से संतुष्ट होकर, भगवान शिव ने उन्हें आशीर्वाद दिया और एक ब्राह्मण को मारने के पाप से मुक्त कर दिया। देवदिदेव रामचंद्र के अनुरोध पर ज्योतिर्लिंग के रूप में प्रकट हुए, इसलिए इस शिवलिंग को रामेश्वरम ज्योतिर्लिंग के नाम से जाना जाता है।
इस मंदिर में दो लिंग हैं, एक है रामेश्वरम ज्योतिर्लिंग और दूसरा है बिश्वलिंग या हनुमानलिंग (जिसे हनुमान कैलाश से लाए थे)। और नंदीश्वर की एक विशाल मूर्ति है।
दुनिया भर से भक्त अपने पिछले पापों का प्रायश्चित करने के लिए इस मंदिर में आते हैं। रामेश्वरम मंदिर के दर्शन किए बिना काशी की यात्रा अधूरी है। यह तीर्थ स्थान शैव और वैष्णव दोनों भक्तों के लिए महत्वपूर्ण है।
मंदिर के आसपास कई और पवित्र स्थान हैं जिनमें उल्लेखनीय अग्निर्थम, गंधमाधाम पर्वत मंदिर, पंचमुखी हनुमान मंदिर, राम सेतु, जड़ तीर्थम मंदिर और कोथंडारामस्वामी मंदिर शामिल हैं।
मंदिर का समय: हर दिन सुबह 5 बजे से दोपहर 1 बजे तक और फिर दोपहर 3 बजे से रात 9 बजे तक।