Kedarnath Temple

কেদারনাথ মন্দির, উত্তরাখণ্ড 

উত্তরাখণ্ডের হিমালয় রেঞ্জে অবস্থিত কেদারনাথ মন্দিরটি বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে সর্বোচ্চ। মন্দাকিনী নদীর উৎসের  নিকটে ৩,৫৪৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত কেদারনাথ ধাম মহাভারতের সময়কালে তৈরী হয়ে ছিল বলে মনে করা হয়। কেদারনাথ মন্দিরটি হিন্দুদের চার ধাম তীর্থস্থান এর মধ্যে অন্যতম একটি।শীতের সময় পাহাড়ের উপর প্রচণ্ড ঠান্ডা, তুষারপাত এবং বিরূপ আবহাওয়ার কারণে মন্দিরটি বন্ধ হয়ে যায় এবং শিবের জ্যোতির্লিঙ্গ রূপটি উখিমঠে নামানো হয়, যেখানে শীতের মাসগুলিতে দেবতার পূজা করা হয়। মন্দিরটি অক্ষয় তৃতীয়ার দিন ভক্তদের জন্য উন্মুক্ত হয় এবং দেওয়ালির দিন আবার বন্ধ হয়ে যায়। 

জনশ্রুতি অনুসারে, মহাভারতের কুরুক্ষেতের যুদ্ধের পরে আত্মীয়দের হত্যার অপরাধে ভারাক্রান্ত পাণ্ডবরা শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শে তাদের পাপগুলি খণ্ডন করার জন্য শিবের মহাতপস্যা করে ছিলেন। ভগবান শিব তাদের অন্যায় কাজ থেকে এত সহজে তাদের মুক্তি দিতে চাননি, তাই তিনি ষাঁড় এর ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন। ভীম বুঝতে পেরে ষাঁড় টি কে ধরতে গিয়ে ছিলেন, কিন্তু ষাঁড়টি মাটির ভিতর প্রবেশ করতে শুরু করেছিল, ভীম গিয়ে ষাঁড়টির পিছন টি জাপ্টে ধরে, তখন ভগবান দেবাদিদেব সেখানে আবির্ভূত হন  এবং তাদের তপস্যা দ্বারা সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান শিব ত্রিভুজাকার জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে এখানে প্রতিষ্ঠিত হন। কেদারনাথ মন্দিরে ত্রিভুজাকার শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত আছে, সমস্ত শিব মন্দিরের মধ্যে যা একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য।

এই মন্দিরটি পঞ্চকেদার এর মধ্যে অন্যতম। মন্দিরটি প্রথমে পাণ্ডবরা তৈরি করেছিলেন এবং পরে হিন্দু গুরু আদি শঙ্করাচার্য পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। উত্তর ভারতে ২০১৩ সালের বন্যার সময় কেদারনাথ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চল ছিল।

উত্তরাখণ্ডের প্রধান গন্তব্যগুলি থেকে, কেদারনাথ মন্দিরের রাস্তাটি গৌরী কুন্ড পর্যন্ত প্রসারিত। এরপরে কেদারনাথ মন্দিরের দিকে ১৪ কিলোমিটার হাঁটা পথে পৌঁছতে হবে। আরোহণ করার সময়  প্রকৃতির প্রাচুর্য, সৌন্দর্য এবং রডোডেন্ড্রন ফুলের মনোরম দৃশ্য আপনাদের মনকে পুলকিত করবে।  বয়স্ক শিশু এবং অসমর্থ দের জন্য ডোলি এবং পালকি  সহজেই পাওয়া যায়। যাতায়াতের শীর্ষ মৌসুমে হেলিকপ্টার পরিষেবা ও পাওয়া যায়। কেদারনাথ মন্দিরের সামনে নন্দীশ্বরের পাথরের বিশাল একটি মূর্তি অবস্থিত। 

মন্দির প্রাঙ্গনে শ্রীকৃষ্ণ, পাণ্ডব, দ্রৌপদী এবং কুন্তি দেবীর মূর্তিগুলি মন্দিরে দেখা যায়। মন্দিরটি হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে হিমসাগর, ভূমিকম্প এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সহ্য করে আসছে। ২০১৩ সালে  বিপর্যয়ের সময় মন্দিরের পিছনে একটি বিশাল আকৃতির একটি শিলাখণ্ড পাহাড় থেকে গড়িয়ে এসে মন্দিরটিকে প্রবল জলোচ্ছাস থেকে রক্ষা করেছিল। শিলা খণ্ডটি ভীম শিলা নামে পরবর্তী কালে পরিচিত হয়। 

গৌরী কুন্ড

এটি কেদারনাথ মন্দিরের দিকে প্রথম পয়েন্ট। জনশ্রুতি অনুসারে, দেবী পার্বতী (গৌরী নামেও পরিচিত) শিবকে বিবাহ করার জন্য এখানে ধ্যান করেছিলেন। এটি প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণ নিয়ে গঠিত এবং তীর্থযাত্রীদের কেদারেশ্বরের পবিত্র দর্শনে যাত্রা করার আগে এই কুন্ডে স্নান করে পবিত্র হয়ে যায়। এখানে একটি প্রাচীন গৌরী দেবী মন্দিরও রয়েছে। গৌরী কুন্ডের অর্ধ কিলোমিটার এর মধ্যে মাথা বিহীন গণেশের একটি মন্দির আছে। স্কন্দ পুরাণ অনুসারে, এই জায়গাটিতেই  শিব গণেশের শিরশ্ছেদ করেছিলেন এবং তারপরে তাঁর মাথা বিহীন দেহের উপর একটি হাতির মাথা সংযুক্ত করেছিলেন।

ভৈরব মন্দির 

মন্দিরের দক্ষিণ দিকে রয়েছে আরও একটি প্রাচীন এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। এটি ভৈরব নাথের মন্দির, যিনি শীত মরশুমে মন্দিরটি বন্ধ হয়ে গেলে, মন্দির প্রাঙ্গণ রক্ষাকারী বলে মনে করা হয়।

ভাসুকি লেক

ভাসুকি হ্রদটি কেদারনাথ থেকে প্রায় 8 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত স্ফটিক স্বচ্ছ নীল-জলের একটি হ্রদ। এটি পৌঁছনোর রাস্তা বেশ কঠিন হিমবাহ পেরিয়ে যেতে হয়।

গান্ধী সরোবর 

গান্ধী সরোবর চোরাবাড়ি তাল নামেও পরিচিত কারণ এটি চোরাবাড়ি নামক হিমবাহের মুখে অবস্থিত। গান্ধী সরোবর কেদারনাথের পাদদেশে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৯০০ মিটার উচ্চতায় কীর্তি স্তম্ভের চূড়ায় অবস্থিত। কেদারনাথ মন্দির থেকে আরও প্রায় ৪ কিমি যাত্রা করার পর এই লেকটি আসে। এই হ্রদটি তে মহাত্মা গান্ধীজির চিতা ভস্ম বিসর্জন করা হয়েছিল বলে এটি গান্ধী সরোবর নামে ও পরিচিত। 

কিংবদন্তী ঘটনা 

কেদারনাথ শিবলিঙ্গকে জাগ্রত লিঙ্গ বলা হয়ে থাকে। একবার এক খুব গরীব ভক্ত বাবা কেদারনাথকে দেখার জন্য পদব্রজে বাড়ী থেকে রওনা দেয়। সেই ভক্ত যখন কেদারনাথ মন্দিরের সামনে এসে উপস্থিত হয় তখন মন্দিরের প্রধান পুরোহিত মন্দিরটিকে ছয় মাসের জন্য বন্ধ করে বের হচ্ছিলেন। কেদারনাথ মন্দির দেওয়ালির দিন বন্ধ হয় আবার বৈশাখ মাসের শেষে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন ভক্তদের জন্য উন্মুক্ত হয়। প্রধান পুরোহিত ভক্তটিকে বললেন, "মন্দির বন্ধ হয়ে গেছে আপনি ছয় মাস পর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন আসুন, ঐ দিন আবার মন্দির খুলবে, এখন আপনি বাড়ী চলে যান"। এই কথা বলে প্রধান পুরোহিত চলে গেলেন। 

কিন্তু ভক্তটির সেই সামর্থ ছিল না যে আবার খরচ করে বা হেঁটে তিনি কেদারনাথ মন্দিরে আস্তে পারবেন। তাই ভক্তটি ঠিক করলেন আর বাড়ী ফিরে যাবেন না, ছয় মাস তিনি এখানেই অপেক্ষা করবেন। দিন শেষ হয়ে রাত্রী নামলো, মন্দিরের কাছাকাছি তখন কেউ ছিল না। প্রচন্ড তুষারপাত ও শুরু হলো। ভক্তটির সঙ্গে সে রকম ভালো গরমের জামাকাপড় ও ছিলো না। প্রচন্ড ঠান্ডায় ভক্তটির অবস্থা খুব খারাফ হয়ে গেলো। তিনি বাবা কেদারেশ্বরকে স্মরণ করতে লাগলেন এবং আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়তে লাগলেন। 

হটাৎ এক জটা ধারী সাধুর ডাকে তার হুস ফিরলো, সেই সাধু তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, "কে তুমি বাবা এখানে এই প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে একা বসে আছো"? তখন ভক্তটি সেই সাধুকে সব কথা বললেন। সাধুটি বললেন, "ঠিক আছে আমি তোমার জন্য কিছু খাবার ও আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছি তুমি বিশ্রাম করো"। ভক্তটি সাধুর দেওয়া খাবার খেয়ে আগুনের সামনে খুব তৃপ্তির সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়লেন। 

হটাৎ কার ডাকে ভক্তটির ঘুম ভেঙে গেলো। তিনি ঘুম থেকে উঠে দেখলেন মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তাকে ডাকছেন। ভক্তটি প্রধান পুরোহিতকে বললেন, "মহারাজ আপনি যে বললেন ছয় মাস পড়ে আবার মন্দির খুলবে, এই কালকে আপনি মন্দির বন্ধ করে গেলেন, আজকে আবার খুলতে চলে এলেন"? প্রধান পুরোহিত তখন ভক্তটির কথা শুনে বললেন, "আজ অক্ষয় তৃতীয়া, আমি তো ছয় মাস পরেই মন্দির খুলতে এসেছি, আপনি এতদিন এই দুর্গম পরিবেশ ও প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে এখানে কি করেছিলেন"। ভক্তটি তখন সমস্ত ঘটনা সবাইকে খুলে বললেন। ভক্তটির কথা শুনে সবাই বুঝতে পারলেন যে দেবাদিদেব ভগবান মহাদেবের আশীর্বাদ ছাড়া এটি অসম্ভব। সবাই ভক্তটিকে বললেন আপনি ধন্য আপনি তাঁর দর্শন পেয়েছেন। 

ভক্তরা ভগবানের সন্তানের মতো, যেমন সন্তান কষ্টপেলে বাবা মা ঠিক থাকতে পারেন না, তেমনই ভক্তরা কষ্টে থাকলে ও তাঁকে আকুল ভাবে ডাকলে, ভগবান ও ঠিক থাকতে পারেন না, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপে তিনি ভক্তদের কাছে এসে তাদের দুঃখ দুর্দশা দূর করেন। 

মন্দিরের সময়: ভোর ৪:00 টা থেকে রাত্রী ৯:00 টা পর্যন্ত 



*******************************************************************************

ENGLISH TRANSLATION :

Kedarnath Temple, Uttarakhand

Located in the Himalayan range of Uttarakhand, the Kedarnath temple is the highest of the twelve Jyotirlingas. Kedarnath Dham, situated at an altitude of 3,544 m near the source of the river Mandakini, is believed to have been built during the Mahabharata period. The Kedarnath temple is one of the four dhamma temple of the Hindus. Due to extreme cold, snowfall and inclement weather on the hill during winter, the temple is closed and the Jyotirlinga form of Shiva is brought down to Ukhimath, where the deity is worshiped during the winter months. The temple is open to devotees on the third day of Akshay and closes again on the day of Diwali.

According to legend, after the battle of Kurukshetra in the Mahabharata, the Pandavas, burdened with the crime of killing their relatives, performed mahatpasya of Shiva on the advice of Lord Krishna to atone for their sins. Lord Shiva did not want to release them from their wrongdoing so easily, so he took the disguise of a bull. Bhima realized that the bull was going to catch , but the bull started to enter the ground, Bhima grabbed the back of the bull, then Lord Devadidev appeared there and satisfied with their austerities, Lord Shiva was established here as a triangular Jyotirlinga. The Kedarnath temple has a triangular Shivling, which is a unique feature of all Shiva temples.

This temple is one of the Panchkedars. The temple was first built by the Pandavas and later rebuilt by the Hindu guru Adi Shankaracharya. Kedarnath was the worst-hit area in northern India during the 2013 floods.

From the main destinations of Uttarakhand, the road to Kedarnath temple extends to Gauri Kund. After that you have to walk 14 km towards Kedarnath temple. The abundance of nature, beauty and beautiful scenery of rhododendron flowers will enchant your mind while climbing. Dolly and palanquin are readily available for older children and the disabled. Helicopter services are also available during the peak season of travel. In front of the Kedarnath temple is a huge stone statue of Nandishwar.

Statues of Lord Krishna, Pandava, Draupadi and Kunti are seen in the temple premises. The temple has withstood natural disasters like icebergs, earthquakes and floods for over a thousand years. During the catastrophe in 2013, a huge boulder behind the temple rolled down from the hill and protected the temple from strong tides. The rock piece was later known as Bhim Shila.

Gauri Kund

This is the first point towards Kedarnath temple. According to legend, Goddess Parvati (also known as Gauri) meditated here to marry Shiva. It consists of natural warm springs and is sanctified by bathing in this pool before the pilgrims set out on a pilgrimage to Kedareshwar. There is also an ancient Gauri Devi temple here. There is a headless Ganesha temple within half a kilometer of Gauri Kund. According to the Skanda Purana, this is the place where Shiva beheaded Ganesha and then attached the head of an elephant to his headless body.

Bhairab temple

To the south of the temple is another ancient and important temple. This is the temple of Bhairab Nath, who is considered to be the guardian of the temple premises when the temple is closed during the winter season.

Vasuki Lake

Lake Vasuki is a crystal clear blue-water lake located about 8 km from Kedarnath. The road to reach it is quite difficult to cross the glacier.

Gandhi Sarobar

Gandhi Sarobar Chorabari is also known as Tal because it is located at the mouth of Chorabari Glacier. Gandhi Sarovar is located at the foot of Kedarnath and at an altitude of 3900 m above sea level. The lake comes after a journey of about 4 km from Kedarnath temple. The lake is also known as Gandhi Sarobar as the ashes of Mahatma Gandhi were dumped in it.

Legendary facts

Kedarnath Shivalinga is called the awakened linga. Once a very poor devotee left home on foot to visit Baba Kedarnath. When the devotee appeared in front of the Kedarnath temple, the chief priest of the temple was closing the temple for six months. The Kedarnath temple closes on the day of Diwali and is reopened to devotees on the third day of Akshay at the end of the month of Baishakh. The chief priest said to the devotee, "The temple is closed. You come on the third day of Akshay after six months. The temple will reopen on that day. Now you go home." After saying this, the high priest left.

But the devotee did not have the ability to spend or walk to the Kedarnath temple again. So the fan decided not to go back home, he would stay here for six months. At the end of the day, night fell and no one was near the temple. Heavy snowfall also started. The fan did not have such nice warm clothes with him. The condition of the fan became very bad in the extreme cold. He began to remember Baba Kedareshwar and began to faint.

Suddenly, he regained consciousness at the call of a saint holding a braid. Then the devotee told the saint everything. The saint said, "Okay, I will burn some food and fire for you. You rest." The devotee ate the food given by the saint and fell asleep in front of the fire with great satisfaction.

Suddenly the car woke up the fan. He woke up and saw the chief priest of the temple calling to him. The devotee said to the high priest, "Your Majesty, you said that the temple will be reopened in six months, you closed the temple yesterday, you reopened today"? The high priest then listened to the devotee and said, "Today is Akshay III, I have come to open the temple after six months, what have you done here in this inaccessible environment and extreme cold." The fan then told everyone the whole story. After listening to the words of the devotee, everyone realized that this is impossible without the blessings of Lord Mahadev. Everyone said to the devotee, "Blessed are you who have seen him."

The devotees are like the children of God, just as the parents cannot be right when the child is in trouble, so when the devotees are in trouble and call on Him anxiously, God cannot be right, He comes to the devotees in different forms at different times and removes their misery.

Temple hours: 4:00 a.m. to 9:00 p.m.


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post